সরকারি চাকরিজীবীদের বিদেশ যাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আমরা আজকে জানবো। যারা সরকারি
চাকরি করেন তাদের নানা কারণে দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য ছুটির প্রয়োজন হয়। অনেক
সময় সরকারি চাকরিজীবীদের বিদেশ যাওয়ার নিয়ম নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে যে,
জিও থাকলে ভিসা লাগবে কিনা।
আজ আমি আপনাদের সামনে জিও থাকার পরেও সরকারি চাকরিজীবিদের বিদেশ যাওয়ার জন্য
ভিসা লাগবে কিনা সে বিষয়ে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করব। মূলত সরকারি
চাকরিজীবিদের বিদেশ যাওয়ার নিয়ম নীতি সম্পর্কে আজকের আর্টিকেল।
সূচিপত্রঃ সরকারি চাকরিজীবিদের বিদেশ যাওয়ার নিয়ম নিয়ম
সরকারি চাকরিজীবিদের বিদেশ যাওয়ার নিয়ম হচ্ছে সরকারি চাকরিজীবিরা চাইলেই হঠাৎ
বিদেশ ভ্রমণ করতে পারে না। সে ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম ও নীতিমালা রয়েছে।
এবং প্রত্যেক সরকারি চাকরিজীবিদের বিদেশ যাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে ভালোভাবে
জানা উচিত। প্রত্যেক সরকারি চাকরিতে বিদেশ যাওয়ার প্রয়োজন হয় তা নয়। কিন্তু
প্রয়োজন হলে বিদেশ যাওয়ার জন্য যে নিয়ম রয়েছে সেটি মেনেই যেতে হবে।
আজকে এ আর্টিকেলে আপনি জানতে পারবেন ভিসা কী, জিও কী, এবং এদের দুজনের
সম্পর্ক কতটুকু সরকারি চাকরিজীবিদের বিদেশ যাওয়ার নিয়ম এর ক্ষেত্রে। সেসঙ্গে
আপনাকে জানতে হবে এনওসি কী। এবং এসবের কোনটার গুরুত্ব ও কার্যকারিতা কতটুকু। এসব
জানতে এবং বুঝতে পারলে আপনি সরকারি চাকরিজীবিদের বিদেশ যাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে
ভালোভাবে বুঝতে পারবেন।
শুরুতে জানা প্রয়োজন ভিসা কী
শুরুতে জানা প্রয়োজন ভিসা কী? ভিসা কথাটির অর্থ হচ্ছে অনুমতি পত্র। আপনি
যখন নিজের দেশ থেকে অন্য দেশে প্রবেশ করতে চাইবেন এবং ঘুরতে বা থাকতে চাইবেন তখন
ভিসা আবশ্যক। মূলত অন্য দেশে থাকা, প্রবেশ, ঘোরা, চিকিৎসা বা অন্যান্য যে কোন
কাজের জন্য বৈধ অনুমতি পত্রই হচ্ছে ভিসা। বিদেশের মাটিতে এটি ছাড়া আপনি কিছুই
করতে পারবেন না।
আপনি যদি ভিসা ছাড়া বিদেশে গিয়ে থাকেন তাহলে সেটি হবে আপনার অবৈধ প্রবেশ বা
অবৈধ অভিবাসী। এর জন্য আপনি দেশের বাইরে গিয়ে নানা সমস্যায় পড়তে পারেন। আপনাকে
জেলে যেতেও হতে পারে। যদিও এসব সাধারণ কথা প্রায় সব মানুষই জানে।এক কথায় আপনি
অন্য দেশে ভিসা ছাড়া একদমই অচল।এখন জানার বিষয় হচ্ছে সরকারি চাকরিজীবিদের এর
প্রয়োজন আছে নাকি নাই?
ভিসা পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস
ভিসা পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস হলো জিও। জিও অর্থ পাসপোর্ট। কোন দেশের
অধীনস্থ বিদেশে থাকা দূতাবাস বা অ্যাম্বাসী গুলো সাধারণত ভিসা দেয়। সরকারি
ভাবে ভ্রমণের অনুমতির জন্য পাসপোর্ট এর একটি পাতায় সীল দিয়ে বা স্টিকার লাগিয়ে
ভিসা দেয়া হয়। তারমানে ভিসা পাওয়ার জন্য পাসপোর্ট এর সাথে সম্পর্ক রয়েছে।
আপনি যদি কোন দেশে গিয়ে সেই দেশের অবৈধ নাগরিক হতে না চান তাহলে অবশ্যই আপনার
কাছে ভিসা থাকা লাগবে। ভিসা আবেদন করতে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস লাগে। নিম্নলিখিত
প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো আপনার ভিসা পাওয়ার জন্য দরকার হবে। তাই নিম্নলিখিত
জিনিসগুলো আপনাকে অবশ্যই সংগ্রহ করতে হবে।
ছয় মাস বয়সে একটি বৈধ পাসপোর্ট
জন্ম নিবন্ধন ও এন আই ডি কার্ডের সাথে মিল রেখে নির্ভুল জন্ম তারিখ
ভিসা আবেদন ফরম ও আপনার দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি
ব্যাংক একাউন্টের সম্পূর্ণ তথ্যসহ ব্যাংক সলভেন্সি
ইনভিটেশন লেটার ও অফিস থেকে নির্ধারণ করে দেয়া ফি
কর্মসংস্থান থেকে ছুটির চিঠি এবং যেখানে আপনার জমি জমা সম্পদের বিবরণ পত্র
চাইবে সেখানে তা দেয়া। ও আপনার ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্কিত দরকারি কাগজ।
জিও কী ও এর কাজ
জিও কী ও এর কাজ গুলো সম্পর্কে জানুন। জিও বা GO এর সম্পূর্ণ অর্থ হলো
Government Order. এর অর্থ সরকারি আদেশ। যা দাপ্তরিক বা সরকারি যেকোনো কাজের জন্য
সরকার বিদেশ পাঠাতে চাইলে জারি করে থাকে। সরকারি কাজেই হোক কিংবা নিজের ব্যক্তিগত
কাজে বিদেশ ভ্রমণের জন্য সরকারি চাকরিজীবিদের জিও বা সরকারি আদেশের প্রয়োজন হয়।
জিও বা সরকারি আদেশ বর্ডার পার হলেই দরকার হয়।বাংলাদেশের বাইরে গমনের জন্য
অবশ্যই সরকারি আদেশের প্রয়োজন। জিও বা সরকারি আদেশ ছাড়া দেশের বাইরে সরকারি
কাজে হোক কিংবা নিজস্ব ব্যক্তিগত কাজে কোন কাজেই যাওয়া যাবে না। সুতরাং দেশের
বাইরে যাবার জন্য জিও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয় জিনস।
পাসপোর্ট এর প্রকারভেদ রয়েছে। সরকারি বা অফিসিয়াল পাসপোর্ট নীল রঙের হয়ে থাকে।
নিজস্ব কাজের জন্য যে পাসপোর্ট ব্যবহার করা হয় সেটির রং সবুজ। বাংলাদেশ বর্ডার
পার হতে চাইলে সাধারণত জিও লাগে। অন্য দেশে যাবার জন্য ভিসা অবশ্যই লাগবে। যদি
অফিসিয়াল পাসপোর্ট থেকে থাকে তাহলে কিছু দেশে এরাইভাল ভিসা পাওয়া যায়।
যেমনঃ চীন, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, তুর্কি, নেপাল, ভিয়েতনাম সহ
ইত্যাদি দেশে এবং সার্কভুক্ত সকল দেশগুলোতে কাগজ দিয়েই প্রমাণ করা যায়।
আপনার যদি সবুজ পাসপোর্ট থাকে তাহলে মালয়েশিয়া, ভারত, চীন যেতে ভিসা লাগবে। আর
আপনার কাছে যদি থাকুক সবুজ বা নীল যে পাসপোর্টই থাক ইউরোপের যে কোন
দেশে যেতে চাইলে অবশ্যই ভিসা লাগবে। এবং যে দেশে যাবার জন্য ভিসা লাগে সেই দেশ
থেকে ভিসা সংগ্রহ করা লাগে। সাধারণত ছুটির কাগজ দেখিয়ে ভিসা সংগ্রহ করতে
হয়।
NOC সম্পর্কে জানুন
NOC সম্পর্কে জানুন। NOC এর পুরো নাম No Objection Certificate. যা
সরকারি চাকরিজীবিদের পাসপোর্ট করার সময় নির্দিষ্ট দপ্তর হতে সংগ্রহ করা লাগে।
এটি ওয়েব সাইটে পাবলিশ করা হয়।। এটি দেখিয়ে সরকারি চাকরিজীবি আবেদনকারীকে কম
খরচে বা নির্ধারণ করে দেয়া ফিতে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর পাসপোর্ট দিয়ে
থাকে। পাসপোর্ট এর রং নীল হয়ে থাকে।
সরকারিভাবে পাসপোর্ট করতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে এনওসি প্রেরণ করতে হবে। আপনাকে
পূরণ করে সাবমিট করা লাগবে। এবং একটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আপনি এটি হাতে
পাবেন। সরকারিভাবে বিদেশ ভ্রমণ করতে চাইলে এনওসি ছাড়া পাসপোর্ট করা সম্ভব নয়।
এবং কোনো দালালের মাধ্যমে না গিয়ে এনওসি করে সরকারি ভাবে বিদেশ ভ্রমণ বেশি
নিরাপদ।
জিও থাকলে ভিসা লাগে কিনা?
জিও থাকলে ভিসা লাগে কিনা? সরকারি চাকরিজীবীদের বিদেশ যাওয়ার নিয়ম এর ক্ষেত্রে
অনেকেই মনে করে থাকেন যে, জিও থাকলে ভিসা লাগেনা। কিন্তু ধারণাটি আসলে ভুল।
অবশ্যই জিও থাকলেও ভিসা করা লাগে। ইউরোপ সহ নানা দেশে ভ্রমণের জন্য আপনাকে অবশ্যই
পাসপোর্ট ভিসার করা লাগবে। বর্ডার পার করতে গেলে শুধু জিও দিয়েই হয়।
সরকারিভাবে বিদেশ ভ্রমণের জন্য বা সরকারি চাকরিজীবীদের বিদেশ যাওয়ার
নিয়ম এর ক্ষেত্রে জিও অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয়। কিন্তু শুধুমাত্র জিও
থাকলেই হয় না। এর বাইরে আরো অনেক নিয়ম কানুন কাগজপত্রের প্রয়োজন রয়েছে। এবং
অবশ্যই এটি নির্দিষ্ট সময়ের ব্যাপার। শুধু জিও দিয়ে সার্কভুক্ত দেশ এবং এর
বাইরেও আরো সে যাওয়া যায়।
সরকারি চাকরিজীবিদের পাসপোর্ট খরচ কেমন
সরকারি চাকরিজীবিদের পাসপোর্ট খরচ কেমন? অনেকেই মনে করেন সরকারি চাকরিজীবিদের
বিদেশ ভ্রমণের জন্য পাসপোর্ট করতে টাকা লাগে না। কিন্তু সরকারি কাজে বিদেশ গেলে
সরকারি
চাকরিজীবিদের বিদেশ যাওয়ার নিয়ম অনুযায়ী কোনো পাসপোর্ট খরচ লাগে না। কিন্তু
নিজস্ব ব্যক্তিগত কাজে যদি কোনো সরকারি চাকরিজীবি বিদেশ যেতে চান তাহলে পাসপোর্ট
করার জন্য তাকে অবশ্যই খরচ করতে হবে।
নিজস্ব ব্যক্তিগত কাজ বলতে বোঝায় হজ্জ্ব, ঘোরাঘুরি, চিকিৎসা ইত্যাদি
কাজের জন্য বাংলাদেশের বাইরে বিদেশ ভ্রমণ করতে গেলে অবশ্যই পাসপোর্ট খরচ লাগবে।
সকল সরকারি চাকরিজীবীদেরও খরচ দিয়ে পাসপোর্ট করতে হবে। সরকারি কাজ যেমন রাজনৈতিক,
প্রশাসনিক, দাপ্তরিক বা বিভিন্ন সরকারি অফিসিয়াল কাজেও বিদেশ যাওয়া লাগে। সে
ক্ষেত্রে সকল খরচ সরকার বহন করে থাকে। সেখানেও ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতি অনুযায়ী
ভিন্ন ভিন্ন নিয়ম কানুন থেকে থাকে।
অফিসিয়াল পাসপোর্ট ইস্যু প্রসঙ্গে
অফিসিয়াল পাসপোর্ট ইস্যু প্রসঙ্গে কিছু নিয়ম রয়েছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ
সরকার কর্তৃপক্ষ থেকে। সকল মন্ত্রণালয়/বিভাগ/পরিদপ্তর অফিসে কার্যরত সরকারি
কর্মচারী কর্মকর্তা সরকারি আদেশ জিও এর ভিত্তিতে সরকারি কাজে বিদেশ যেতে পারবে।
স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা অথবা রাষ্ট্রায়াত্ত বিভাগের কর্মরত সকল স্কেলের বেতনভুক্ত
কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় করতে জারিকৃত সরকারি আদেশ জিও এর উপর
সরকারি কাজে বিদেশ গমন করতে পারবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর থেকে নিম্নতম
বেতনভুক্ত কর্মকর্তারা সরকারি আদেশে জিও এর ভিত্তিতে বিদেশ যেতে পারবেন।
জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পিকার্মা ,মাননীয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার, দুর্নীতি
দমন কমিশনের চেয়ারম্যান, মহাসচিব নিরীক্ষক, সুপ্রিম কোর্টের মাননীয় প্রধান
বিচারপতি, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের অনুমোদনক্রমে জারিকৃত
সরকারী আদেশ জিও এর ভিত্তিতে যে সকল কর্মকর্তা কর্মচারী সরকারি কাজে বিদেশ
গমন করতে পারবেন তারা হলেন, বিশেষ আইন, অধ্যাদেশ অথবা আদেশে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন
কমিশন অথবা অথরিটিতে কর্মরত জাতীয় সকল স্তরের বেতনভুক্ত কর্মকর্তারা
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত সরকারি আদেশে জিও এর ভিত্তিতে সরকারি কাজে
বিনা ফিতে বিদেশ ভ্রমণ করতে পারবেন। এর বাইরে সরকারি চাকরিজীবিরা নিজস্ব
প্রয়োজনে বিদেশ ভ্রমণ করতে চাইলে এনওসি এর ভিত্তিতে ফী দিয়ে সাধারণ পাসপোর্ট
করা লাগবে।
সরকারি চাকরিজীবিদের বিদেশ ভ্রমণের জন্য অবশ্যই জিও লাগবে। কিন্তু কেউ কেউ
আবার নিজস্ব কাজে জিও ছাড়াই বিদেশ ভ্রমন করতে পারছেন। এবং ঝামেলাতেও পড়ছেন না।
কিন্তু আপনি যদি সরকারি চাকরিজীবি হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার জন্য জিও
বাধ্যতামূলক। কারণ সরকারি চাকরি করে সরকারের আদেশ ব্যতীত দেশের বাইরে যেতে পারেন
না।
সরকারি চাকরিজীবিদের বিদেশ যাওয়ার নিয়ম প্রসঙ্গে অবশ্যই আপনাকে সংশ্লিষ্ট
মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করে আরো বিস্তারিত ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। এবং আরো
কি কি কাগজ বা ছবি লাগবে তা আপনাকে জেনে বুঝে নিয়ম কানুন মেনে জিও এর মাধ্যমে
দেশের বাইরে যেতে পারবেন। এখন অনলাইনে ফর্মে আবেদন করে পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে
পারেন। এনওসি দিয়ে পাসপোর্ট করে জব ভিসায় এবং টুরিস্ট ভিসায় আপনি বিদেশ
যেতে পারবেন।
রওশন ব্লগের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url