মরিঙ্গা পাউডার খাওয়ার নিয়ম ও এর সুবিধা অসুবিধা
সূচিপত্রঃ মরিঙ্গা পাউডার খাওয়ার নিয়ম
মরিঙ্গা পাউডার খাওয়ার নিয়ম
মরিঙ্গা পাউডার খাওয়ার নিয়ম অনেকেরই অজানা। যেকোনো উপকারী জিনিস খাবার একটি নিয়ম রয়েছে। এর উপকারিতা জানার পরে না জেনে নিজের মত করে খাওয়া কখনোই উচিত নয়। এতে আপনি সুবিধার পরিবর্তে অসুবিধায় করতে পারেন। তাই অসুবিধা এড়াতে চাইলে যে কোন কিছু খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানুন। এই পাউডার আপনি সকালে, দুপুরে এবং রাতে যেকোনো সময় খেতে পারেন।
আপনি চাইলে এটি খালি পেটে অথবা ভরা পেটেও খেতে পারেন। তবে যে কোন পুষ্টিকর জিনিস
খালি পেটে খাওয়া অতি উত্তম যদি আপনার বিশেষ কোনো অসুবিধা না থাকে। মরিঙ্গা
পাউডার খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে খুঁটিনাটি বিস্তারিত জানতে নিজের লেখাগুলো অবশ্যই
পড়তে হবে। মরিঙ্গা পাউডার আপনি সরাসরি অথবা কোন কিছুর সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।
এবং এটি খাওয়ার পরে আপনি আপনার শরীরে নানা পরিবর্তন বুঝতে পারবেন।
মরিঙ্গা পাউডার কখন খাবেন
মরিঙ্গা পাউডার কখন খাবেন? আগেই বলা হয়েছে যে আপনি এটি তিন বলার যে কোন একটা সময় খেতে পারেন। কিন্তু মরিঙ্গা পাউডার খাওয়ার নিয়ম জানতে চাইলে কোন বেলায় আপনি কিভাবে কতটুকু পরিমাণে এবং কিসের সাথে মিশিয়ে খাবেন তা জানতে হবে। এবং কোন বেলায় খেলে আপনি কোন উপকারটি বিশেষভাবে পাবেন এবং মূলত কোন সুবিধা পেতে আপনি এটি খাচ্ছেন তা নিশ্চিত করে সময় নির্ধারণ করুন।
সকালে খাবার সুবিধাঃ যে কোন খাবারের পুষ্টি উপাদান রক্তের মাধ্যমে
আমাদের শরীরের অন্য জায়গায় পৌঁছে যায়। আপনি যদি সকালে খালি পেটে যেকোনো
পুষ্টিকর খাবার খান তাহলে সেটি খুব সহজেই আপনার শরীর শুষে নিবে। আর আপনি যদি ভরা
পেটে খান তাহলে আপনার শরীরে পৌঁছাতে অনেক সময় লেগে যায়। এবং সম্পূর্ণ পুষ্টি
উপাদান শরীরের শুষে নিতে পারে না। তাই শুধু এই পাউডার নয় যেকোনো পুষ্টিকর খাবার
সাধারণত সকলে খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে। এই পাউডারকে প্রাকৃতিক শক্তিবর্ধক
বলা হয়ে থাকে।
আরও পড়ুনঃ গাজর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন
রাতে খাবার সুবিধাঃ আপনার যদি ঘুমের কোন সমস্যা থাকে তাহলে ভালো ঘুম
পেতে রাতে আপনি এই পাউডার খেতে পারেন। রাতের বেলা আমাদেরকে নানা ধরনের কাজ করে
থাকে। তাই এ সময় সাধারণত শক্তি,পুষ্টি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর দরকার হয়। তাই
রাতের বেলা আপনি সজনে পাতার গুঁড়ো খেতে পারেন। এটি হজমে সাহায্য করে বিভিন্ন
অংশে পৌঁছে যায় এবং ঘুম খুব ভালো হয়।
মরিঙ্গা পাউডার কিভাবে খাবেন
মরিঙ্গা পাউডার কিভাবে খাবেন? আপনি মরিঙ্গা পাউডার যেকোনো কিছুর সাথে অথবা সরাসরি খেতে পারেন। আপনার যদি প্রতিদিন চা খাবার অভ্যাস থাকে তাহলে আপনি চায়ের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। এর ফলে আপনাকে আলাদা করে কোন ব্যবস্থা করা লাগে না অথবা খরচ করা লাগেনা। এর ফলে চায়ের মধ্যে বিদ্যমান পুষ্টিগুণ আরো বেড়ে যায়। আপনি যদি গ্রিন টি হিসেবে এই পাউডার খান তাহলে অনেক উপকার পাবেন।
- আপনি এদিকে কোন খাবারের সাথে না মিশিয়ে শুকনো পাউডার হিসেবেও খেতে পারেন। কিন্তু শুকনো খাওয়াটা অনেকের কাছে বেশ অসুবিধার। এক্ষেত্রে আপনি এদিকে পানি অথবা দুধের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। সালাদের সাথেও মিশিয়ে খেতে পারেন। ওজন কমানোর জন্য সালাত অনেক বেশি উপকারী। তাই সালাদের সাথে যে কোন পাউডার মিশিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে। এটি ওজন কমানোর সাথে সাথে পর্যাপ্ত পুষ্টির যোগান দিয়ে থাকে। এবং এর কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই।
- এছাড়া আপনি হলে যে কোন শরবতের সাথে সজনে পাউডার মিশিয়ে খেতে পারেন। এটি এক থেকে শরীরকে ঠান্ডা ও সুস্থ রাখে অন্যদিকে শরীর থেকে বিভিন্ন বিষাক্ত উপাদান গুলিকে বের করে দেয়। লেবুর শরবতের সাথে আপনি এই পাউডার মিশিয়ে খেতে পারেন। এছাড়াও যেকোনো ফলের রস যেটি আপনার পছন্দ তার সাথে আপনি মিশিয়ে খেতে পারেন। এর ফলে ফলের রসের পুষ্টিগুণ আরো বেড়ে যায়।
- এছাড়াও সুগার ফ্রি বিভিন্ন কেক পাওয়া যায়। যেগুলোর সাথে আপনি মিশিয়ে খেতে পারেন। ময়দার সাথে সজনে পাতার গুঁড়ো মিশিয়ে নতুন একটি ফ্লেভারে আপনি কেক তৈরি করতে পারেন। চিনি দিলে স্বাদ বাড়বে কিন্তু এতে আপনার খাবারের ক্যালোরি অনেক বেশি বেড়ে যাবে। আপনি যদি একজন স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে চিনি কে এড়িয়ে চলুন। এইভাবে আপনি পাউডারের গুনাগুন আপনার শরীরের ভেতরে প্রবেশ করাতে পারেন।
- আরেকটি সহজ পদ্ধতি রয়েছে সেটি হল বড়ি বানিয়ে খাওয়া। আমাদের দেশে আগে থেকেই নিম পাতার বড়ি বানিয়ে খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। নিমপাতা যেহেতু তিতা তাই এটিকে বেটে নিয়ে ছোট ছোট গোল করে পানির সাথে ওষুধের মত গিলেখেয়ে নেয়া হয়। এতে খাওয়া সহজ হয় অনেক। আপনিও চাইলে এই পাউডারকে ঝামেলা মুক্তভাবে ওষুধের মত করে খালি পেটে খেতে পারেন। এছাড়াও বিভিন্ন ড্রাই ফল, হানিনাট, যে কোন মিশ্রিত খাবারের সাথে এই পাউডার মিশিয়ে নিয়ে খাওয়া যাবে।
এই পাউডার খাওয়ার সুবিধা গুলো কি কি
- শরীর থেকে কোলেস্টেরল কমায়ঃ কোলেস্টেরল আমাদের শরীরের জন্য অনেক ক্ষতিকারক তা আমরা সবাই জানি। নিয়মিত সজনে পাতার গুড়ো সেবনে আপনার শরীর থেকে এই ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলকে কমিয়ে ফেলে। ডায়াবেটিস বেড়ে যাবে। যা আমরা কেউ চাই না। পাতার গুড়ো খেলে আপনার শরীর থেকে শর্করার পরিমাণ কমে যাবে এবং ডায়াবেটিস থেকে দূরে রাখবে।
- প্রদাহ কমিয়ে ফেলেঃ প্রদাহ আপনারা শরীরের জন্য ক্ষতিকারক। এই পাতার গুড়ো আপনার শরীরের প্রদাহ ও ব্যথাকে কমিয়ে ফেলে আপনাকে সুস্থ রাখে।
- শর্করার মাত্রা কে নিয়ন্ত্রণ করেঃ আপনার শরীরের রক্তে যদি শর্করার মাত্রা বেড়ে যায় তাহলে ডায়াবেটিস হবে। যা আমরা কেউই চাই না। তাই এর নিয়মিত সেবনের ফলে শর্করার মাত্রা কে কমিয়ে ডায়াবেটিস মুক্ত রাখে।
- আর্সেনিক যুক্ত বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়ঃ হার্ট ও ত্বকের জন্য আর্সেনিক হলো বিষাক্ত পদার্থ। এছাড়াও আর্সেনিক ক্লিন ক্যান্সারের জন্য দায়ী। তাই শরীর থেকে এই আর্সেনিক বের করতে চাইলে অথবা মুক্ত রাখতে চাইলে নিয়মিত সেবন করুন সজনে পাতার গুড়ো।
- লিভার ভালো রাখেঃ এগুলো কোলেস্টেরল কে নিয়ন্ত্রণে রাখার মাধ্যমে লিভারে ফ্যাট জমতে দেয় না। ফলের লিভার সিরোসিস সহ লিভারের যেকোনো সমস্যা থেকে দূরে রাখে।
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করেঃ এতে থাকা প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার ফলে তারুন্যকে ধরে রাখে।
- ক্যান্সার রোগের সমাধান করেঃ এই পাউডারে নিয়াজিমিসিন নামে একটি উপাদান রয়েছে। যা ক্যান্সারের ঘোষকে ধ্বংস করে দেয়।
- আর্থ্রাইটিস থেকে দূরে রাখেঃ এই পাউডারে থাকা উচ্চ ভিটামিন ও মিনারেল পেশির ব্যথা, হাড়ের ব্যথা ও বিভিন্ন জয়েন্টের ব্যথাকে দূরে রাখে।
- পাকস্থলীর সমস্যার সমাধান করেঃ মানুষের পাকস্থলীতে এক ধরনের এসিড থাকে যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু গবেষণা করে দেখা গেছে যে এই পাউডারের থাকা বিশেষ পুষ্টিগুণ ৮৫ শতাংশ এসিডকে ধ্বংস করে দেয়।
- অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণ করেঃ অ্যাজমার ফলে সৃষ্টি হাওয়া সর্দি-কাশি সমাধান করে এই পাউডার। এই রোগের জন্য এর ব্যবহার অনেক আগে থেকেই চলে আসছে।
- দৃষ্টি শক্তি বাড়ায়ঃ আপনার যদি দৃষ্টি শক্তি নিয়ে কোন সমস্যা থাকে অথবা ভবিষ্যতে আপনি যদি এইরকম সমস্যায় পড়তে না চান তাহলে প্রতিদিন সেবন করুন সজনে পাতার গুঁড়ো। এটি আপনার চোখের জন্য অনেক উপকারী।
- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করেঃ এদের হয়েছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম ও আয়রন যা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
মরিঙ্গা পাউডার খাওয়ার অসুবিধা
মরিঙ্গা পাউডার খাওয়ার অসুবিধা রয়েছে। যেগুলো সম্পর্কে অবশ্যই আপনার জানা উচিত। তা না হলে আপনি বিভিন্ন নিয়ে পড়তে পারেন। অনেকেরই অনেক ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। আবার বিশেষ কোনো সমস্যা থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েও খাওয়া উচিত। আপনার শরীরের কি সমস্যা সেটা সবথেকে ভালো আপনি নিজেই বলতে পারবেন। তাই আপনার যদি মনে হয় আপনার এই বিশেষ কোনো সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া উচিত তাহলে অবশ্যই সবার আগে সেটি করুন। এছাড়াও সজনে পাতার গুঁড়ো খাবার পর বিশেষ কোনো অসুবিধা লক্ষ্য করেন তাহলে এটি খাওয়া বন্ধ করে দিন।
- আপনার যদি ব্লাড প্রেসারের ওষুধ খাওয়া লাগে তাহলে মরিঙ্গা পাউডার কখনোই খাবেন না। এর ফলে আপনার প্রেসার অনেক বেশি কমে যাবে যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ক্ষতিকর।
- আপনি যদি প্রয়োজনের থেকে বেশি মাত্রায় সজনে পাতা নিয়মিত খেতে থাকেন তাহলে হজমে সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার কারণে আপনার বমি বমি ভাব লাগতে পারে, খাবার চাহিদা কমে যেতে পারে, এছাড়াও পেটে ব্যথা করতে পারে।
- আপনি যদি একজন গর্ভবতী মা হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই এই পাউডার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কারণ এই পাতার ডালগুলো গর্ভবতী মায়ের শরীরের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর। কারণ এইগুলি একজন গর্ভবতী মায়েরে শরীরে ইমিউনিটি সিস্টেমের ক্ষতি করে। তাই এই সময় আপনি এই পাউডার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
- আপনি যদি অতিরিক্ত ডায়াবেটিসের কারণে ওষুধ খেয়ে থাকেন তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ সজনে পাতার গুড়ো খান। কারণ এটি ডায়াবেটিসের কাজ করে না এটি শুধুমাত্র একটু সাহায্য করে।
- আপনার কোন অসুবিধা থাকলে কখনোই এই পাউডার খাবেন না। ঠিক রাখার জন্য আপনি ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে পরিমাণ মতো খেতে পারেন। অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে আপনার সমস্যা বেড়ে যাবে।
- এবং আপনি যদি অন্য কোনো কারণে ওষুধ খেয়ে থাকেন তাহলে আপনি অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন যে এটি খেলে আপনার কোন অসুবিধা হবে কিনা। কারণ এটি ওষুধের কার্যকারী তাই ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
- এবং পুষ্টিবিদদের মতে এটি সত্তর গ্রামের বেশি খাওয়া উচিত নয়। বেশি খেলে আপনার শরীরে থাকা ভিটামিন ও মিনারেল বিষাক্ত করে দিতে পারে। তাই পরিমাণ মতো গ্রহণ করুন।
রওশন ব্লগের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url